স্টাফ রিপোর্টার, বিশালগড়, ১৪ আগস্ট।। রাজ্যের জনজাতিদের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নে একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। আগামী ৫ বছরের মধ্যে রাবার নির্ভর ৬০০ কোটি টাকার অর্থনীতিসহ মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্পে বড়মাত্রায় রোজগার তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
আজ জম্পুইজলা মহকুমার পাথালিয়াঘাট তারাপদ পাড়াতে রাজ্যভিত্তিক মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্পের উদ্বোধন করে এই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিগণ রাবার গাছের চারা রোপন করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন উন্নয়নের প্রধান শর্ত হলো শান্তি। একটা সময়ে রাজ্যে সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপে উন্নয়ন ব্যাহত হয়। যাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জনজাতির অংশের নাগরিকরা। এই প্রকল্পের সহায়তায় ধাপে ধাপে রাবার বাগান তৈরীতে নানা ভাবে সহায়তা করা হবে।
ইতিমধ্যেই প্রায় ২০০টি স্মোক হাউস স্থাপনের ফলে গুণগত রাবার সিট প্রস্তুত করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বিগত দিনে হ্রাস পাওয়া রাবারের মূল্য বর্তমানে সঠিক ব্যাবস্থাপনার ফলে বেড়েছে। উন্নতি হয়েছে রাবার বিক্রয়ের বাজার। ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তার সুফল পাচ্ছেন রাজ্যের নাগরিকগণও।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টি এস আর সহ বিভিন্ন দপ্তরের নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার। তাই সমস্ত অংশের নাগরিকদের সর্বাঙ্গিন উন্নয়নে সরকার দায়বদ্ধ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল সহ প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে উন্নয়নে সফলতা এসেছে। জনজাতি এলাকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১৮ টি একলব্য বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বর্তমানে সি বি এস ই পরিচালিত ও ইংরেজী মাধ্যম সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী সঠিক ব্যাবস্থপনার ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে বিনামূল্যে কোভিড টিকা যেমন মিলেছে তেমনি হয়েছে চালের ব্যাবস্থাও। কোভিড অতিমারির মধ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যসরকারের বিভিন্ন সহায়তার ফলে একজনকেও অনাহারে থাকতে হয়নি।
দেশ ব্যাপী টিকাকরণ কর্মসূচিতে আরও গতি আনতে রাজ্যে ইতিমধ্যে ১৮ ঊর্ধ বয়সীদের ৯৩ শতাশং টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন কোভিড অতিমারীর মধ্যেও এমজিএন রেগায় শ্রমদিবস যেমন বেড়েছে পাশাপাশি স্টার্ট আপের মাধ্যমেও রোজগার তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের জনজাতিদের খাদ্য তালিকায় বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে বাশ করুল।
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নিজে ত্রিপুরার বাশ করুল থেকে প্রস্তুত বিস্কিট খেয়েছেন। তিনি বাশ করুলের তৈরি বিস্কুটের প্রশংসাও করছেন। শুধু তাই নয় বাশ করুল থেকে আচার তৈরীরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এটাই বিগত দিনের সঙ্গে দৃষ্টির পার্থক্য। শুধু তাই নয়, সঠিক ব্যাবস্থপনার ফলে ত্রিপুরার রিসা আজ গোটা দেশে পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় আগরতলার বিমান বন্দরে নাম করণ মহারাজা বীরবিক্রমের নামে করা হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় জনজাতিদের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কতটা আন্তরিক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন, রাজ্যে জনজাতিদের উন্নয়নে অনেক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্প। সারা রাজ্যে এখনও অনেক টিলা ভূমি রয়েছে।
সরকার আস্তে আস্তে উপজাতি কল্যাণ দপ্তর, টি এফ ডি পি সি, রাবার বোর্ড, এ ডি সি সহ বিভিন্ন এজেন্সীর মাধ্যমে আগামী ৫ বছরে সুবিধাভোগীদের রাবার বাগান করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
যারা প্রকৃত গরীব তাদের উপজাতি কল্যাণ দপ্তর থেকে বাগান করে দেওয়া হবে। ভূমির পাট্টা প্রাপকদেরকে শুধু রাবার বাগানই নয় বাঁশ, সেগুন, চন্দন, আগর ইত্যাদি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে এই সমস্ত বাগানও করে দেয়া হবে।
যাদের টিলা ভূমি রয়েছে তাদেরকে সরকারিভাবে ধাপে ধাপে রাবার বাগান করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে ধাঁপে ধাপে সারা রাজ্যে ৩০ হাজার হেক্টর এলাকায় রাবার বাগান করার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে রাজ্যের জনজাতিদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটবে। মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্পে আজ ৩৪ জনকে জমির পাট্টা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সমেন্দ্র দেববর্মা, দৈঘ্যছড়ি দেববর্মা, ভাস্কর দেববর্মা, মাধাই দেববর্মা, লক্ষীরাণী দেববর্মা, হলিন্দ্র দেববর্মা ও ভাদ্রাই দেববর্মাদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী জমির পাট্টা তুলে দেন। টিএফডিপিসি, জনজাতি কল্যাণ দপ্তর, রাবার বোর্ড, টিআরপিসি’র যৌথ উদ্যোগে ৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পে বিনামূল্যে প্রত্যেককে ১ হেক্টর করে রাবার বাগান করে দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব তনুশ্রী দেববর্মা।
ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক বিশ্বশ্রী বি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক বীরেন্দ্র কিশোর দেববর্মা। ভারতের রাবার বোর্ডের নির্বাহী অধিকর্তা ডা. কে এন রাঘবন প্রমুখ।