ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন সহ পর্যটনের বিকাশেও নতুন দিগন্তের সূচনা হলো : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ৯ মার্চ।। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে মৈত্রী সম্পর্ক রয়েছে ফেণী নদীর উপর সেতু নির্মাণের ফলে সেই সম্পর্ক আরও মজবুত হবে৷ পাশাপাশি এই সেতুর নির্মাণের মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন সহ পর্যটনের বিকাশেও নতুন দিগন্তের সূচনা হলো৷ এর সুুফল ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলিও লাভ করতে পারবে৷ আজ বিজেপি-আই পি এফ টি সরকারের তিন বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফেণী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে একথা বলেন৷ আগরতলায় স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে এ উপলক্ষে আয়োজিত হয় এক জনসমাবেশ৷

এদিন প্রধানমন্ত্রী এছাড়াও আগরতলায় ইন্টিগ্রেটেড কমাণ্ড অ্যাণ্ড কন্ট্রোল সেন্টার, আগরতলা-উদয়পুর (এন এইচ ৮) জাতীয় সড়ক প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (শহর) ৪০ হাজার ঘর এবং রাজ্য পূর্ত দপ্তরের সড়কের উদ্বোধন করেন৷ এছাড়াও তিনি ৪টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন৷ প্রকল্পগুলি হলো সাবমে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, কৈলাসহর-খোয়াই (এন এইচ ২০৮) সড়ক, মাল্টিলেভেল কার পার্কিং অ্যাণ্ড কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স এবং এয়ারপোর্ট রোডকে দুই লেন থেকে চার লেনে প্রশস্তকরণ৷

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস এবং মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করে বলেন, সাবমের মৈত্রী সেতু বাংলাদেশ, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক করিডোর স্থাপন করবে৷ ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলিও এই প্রথম সমুদ্র বন্দরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সুুযোগ ঘটবে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে এখন থেকে শুধুমাত্র সড়ক পথের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে না৷ জলপথ, রেলপথ, আকাশপথ সবদিকেই এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার সুুযোগ সম্পসারিত হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবমে যে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরি হবে এতে বাংলাদেশ সহ উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলির জন্য ত্রিপুরা লজিস্টিক হাব হিসেবে কাজ করবে৷ এন এইচ ৮ জাতীয় সড়ক প্রশস্তকরণ উত্তর পূর্বা’লের রাজ্যগুলিকে বন্দরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করবে৷ ত্রিপুরায় উৎপাদিত ফল, সব্জি সহ বিভিন্ন সামগ্রী দেশ বিদেশে বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে নতুন বাজার পাওয়া যাবে৷ ফলে সহজেই আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে উঠা সম্ভব হবে৷

তিনি আরও বলেন, নতুন ইন্টিগ্রেটেড কমাণ্ড অ্যাণ্ড কন্ট্রোল সেন্টার মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে শহরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, ট্রাফিক সমস্যা নিরসন সহ বহুমুখী কার্য সম্পাদন হবে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে ৩ বছর পূর্বে ত্রিপুরার জনগণ এক নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিলেন যা পুরো দেশকে এক নতুন শক্তি জগিয়েছিলো৷ রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে নেতিবাচক শক্তি কায়েম ছিলো তা সরিয়ে রাজ্যের জনগণ এক নতুন যাত্রা শুরু করেছিলেন৷

বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে ত্রিপুরা আজ উন্নয়নের পথে চলছে৷ ২০১৮ সালে ত্রিপুরা ও দিল্লির ডাবল ইি’ন সরকার স্থাপনের ফলে ত্রিপুরার প্রগতির রাস্তা আরও প্রশস্ত হয়েছে৷ আজ ত্রিপুরাবাসী বিগত সরকারের ৩০ বছর এবং বর্তমান ডাবল ইি’ন সরকারের তিন বছরের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির পার্থক্য স্পষ্ট অনুভব করছেন৷ তিনি বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য এই ডাবল ইি’ন সরকারের ফলেই রাজ্যের ক’ষকদের নূ্যনতম সহায়ক মূল্যে ধান কেনা নিশ্চিত হয়েছে, রেগার শ্রমিকদের মজরি বৃদ্ধি পেয়েছে, রাজ্যে শিল্প স্থাপন বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিগত দিনে ত্রিপুরা শিল্পক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছিলো৷

বর্তমানে উদ্যোগীরা রাজ্যে শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেখাচ্ছে৷ ফলে ত্রিপুরা আজ দেশের বড় রাজ্যগুলির জন্যও উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের আগে রাজ্যে ১৯ হাজার গ্রামীণ পরিবারে টেপের মাধ্যমে জল সংযোগ দেওয়া হয়েছিলো৷ বর্তমানে ডাবল ইি’ন সরকারের কারণে রাজ্যে এখন ২ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনা, উজ্জলা যোজনা ইত্যাদির মাধ্যমে ত্রিপুরার মহিলাদের স্বশক্তিকরণের কাজও ডাবল ইঞ্জিন সরকার করেছে৷ ত্রিপুরায় ৪০ হাজার গরীব পরিবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নতুন ঘর পাবেন যা তাদের স্বপকে পূরণ করবে৷ ত্রিপুরার বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গ্রামীণ ও শহর এলাকায় দ্রতগতিতে কাজ করছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা দেশের ৬টি রাজ্যের মধ্যে অন্যতম যেখানে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে গরীবদের জন্য ঘর তৈরি করা হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরায় হীরা (জ্জট্ট) স্থাপনের প্রতিশ্রতি দিয়েছিলো৷

গত তিন বছরে ত্রিপুরায় রেল, সড়ক, আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন দ্রতগতিতে হয়েছে৷ আজ ৩ হাজার কোটি টাকার যেসব প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে সেগুলিও হীরার অন্তর্ভক্ত৷ ত্রিপুরায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন রাজ্যবাসীর জীবনযাত্রার মান আরও সহজতর করেছে৷ বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে আগামীদিনেও বজায় রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন৷

মৈত্রী সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজ্যবাসীর প্রতি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, এই সেতু উদ্বোধনের ফলে দু’দেশের সম্পর্ক আরও সুুদৃঢ় হবে৷ স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল রমেশ বৈস৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশ আজ আত্মনির্ভরতার দিকে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি ত্রিপুরাও আজ আত্মনির্ভরতার পথে অগ্রসর হচ্ছে৷

ত্রিপুরার সার্বিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহিত করছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ত্রিপুরায় একটা অন্ধকারময় দিক ছিলো, বর্তমানে তা থেকে বেরিয়ে ত্রিপুরা আজ এক নতুন দিশা নিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ ত্রিপুরায় কর্মসংস্কৃতি যেমন এসেছে তেমনি কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং দায়বদ্ধতাও বেড়েছে৷ মানুষ নিজেরা স্বরোজগারি হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের রোজগার দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন৷

অর্থাৎ জব ক্রিয়েটর তৈরি হচ্ছে রাজ্যে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বা’লকে অষ্টলক্ষী রূপে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর যে দৃষ্টিভঙ্গি তার বাস্তবায়নে ত্রিপুরা অগ্রণী ভূমিকা নেবে৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রেরণা, আশীর্বাদ এবং বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে সারা দেশের সামনে ত্রিপুরা এক নতুন ত্রিপুরা রূপে প্রস্তুত হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ অনুষ্ঠানে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, আজ ত্রিপুরার জন্য এক ঐতিহাসিক দিন৷

প্রধানমন্ত্রীর প্রদর্শিত দিশা এবং সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এই মূলমন্ত্রকে পাথেয় করে বর্তমান রাজ্য সরকার কাজ করছে৷ ত্রিপুরাকে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সহ সামগ্রিক দিক থেকে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারকে মানুষের কাছে পৌঁছানো বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য৷ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, সরকারের কাজে স্বচ্ছতা সহ ত্রিপুরায় বিশেষ করে গ্রামগুলিকে স্বয়ংসম্পর্ণ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে রাজ্য সরকার৷

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বনমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া, খাদ্যমন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব, সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা এবং বিধায়কগণ৷

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চ্যাট খুলুন
1
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠান
হেলো, 👋
natun.in আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারে?