স্টাফ রিপোর্টার, আগরতলা, ২৩ মার্চ।। নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সমাজের সব অংশের মানুষের বিশেষ করে অভিভাবকদের সহযোগিতা চেয়েছেন৷
তিনি আজ রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক সুুদীপ রায় বর্মণের জনস্বার্থে আনা একটি নোটিসের জবাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, যুব সমাজ যাতে নেশায় আসক্ত হয়ে নিজেদের জীবন বিপন্ন না করে সেই লক্ষ্যে রাজ্যের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই নেশামুক্ত ত্রিপুরা গঠনের শ্লোগান দেয় এবং সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে৷
সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যে বিভিন্ন বেআইনী নেশা বিরোধী অভিযান বৃদ্ধি করা হয় এবং এরফলে রাজ্যে বিরাট পরিমাণ বেআইনী গাঁজা, ফেন্সিডিল, টেবলেট, হেরোইন ইত্যাদি নেশাদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি, সহযোগী নেশাদ্রব্য চালানকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ এছাড়া নেশা জাতীয় দ্রব্যের উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাধা তৈরি করা হয়৷
এ বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর ২০১৮ সালে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন, গ্রহণ, চালান ইত্যাদির জন্য ৪৩৩টি মামলা করা হয়৷ ৬৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ৬৫ হাজার ৩৩৪ কেজি গাঁজা বাজেয়াপ্ত করা হয়৷ অথচ এর আগের বছর ২০১৭ সালে এ সংক্রান্ত মাত্র ৮৩টি মামলা করা হয়৷ ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ৮,৫৯০ কেজি গাঁজা বাজেয়াপ্ত করা হয়৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেখা গেছে বিভিন্ন নেশা সামগ্রীর এই অবৈধ কারবার মূলত রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল৷ এর ব্যবহার সুকল, কলেজের ছাত্রছাত্রী সহ সমাজের সব অংশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজে এক অস্থির পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু প্রকৃত নেশা কারবারীরা সব সময়ই আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে৷ শুধুমাত্র যারা আনা নেওয়ার কাজটি করে তাদেরকেই আটক করে বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়।
তিনি বলেন, নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে রাজ্য পুলিশ -এর সাহায্য নিয়ে এবং তাদের সহযোগে এই সময়ের মধ্যে নেশা কারবারী যারা গাঁজা, ফেন্সিডিল, টেবলেট, হেরোইন ইত্যাদি বেআইনী সামগ্রী নিয়ে কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে বহু সফল অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে৷ তাছাড়াও আরেকটি কেন্দ্রীয় এজেন্সী রাজ্যে বেআইনী নেশাজাতীয় দ্রব্যের পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে৷ এর সঙ্গে রাজ্য পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বেআইনী নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিরুদ্ধে সফল অভিযান সংঘঠিত করা গেছে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটি বিশেষ আইন এবং এই আইনের ধারাগুলির সঠিক প্রয়োগের জন্য তদন্তকারী অফিসারদের উপযুক্ত ট্রেনিং দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সীর সহায়তায় ফিল্ড লেভেল অফিসার এবং সুুপারভাইজারি লেভেলের অফিসারদের রাজ্যে এবং রাজ্যের বাইরে উপযুক্ত ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, নেশা জাতীয় সমস্ত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারও সার্বিক পদক্ষেপ নিয়েছে৷ উত্তর-পূর্বা’লের প্রতিনিধি, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতিনিধি, পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহ যথা বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং রাষ্ট্রসংঘের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সেমিনার এবং ট্রেনিং প্রোগ্রাম করা হয়েছে৷ এরফলে নেশা বিরোধী কার্যক্রমে সুুফল পাওয়া গেছে৷
বিগত ২০১৯ সনের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এবং সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আগরতলাতে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ উক্ত সেমিনারে নেশা কারবারীদের বিরুদ্ধে এনডিপিএস এর ৩নং ধারা প্রয়োগ এবং নেশা পাচারের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তদের নিকট থেকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণে রাজ্য পুলিশের পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে৷
তাই অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নেশা সামগ্রী ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত প্রচলিত আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব৷ মুখ্যমন্ত্রী নেশা মুক্ত ত্রিপুরা গঠনে পুলিশ, প্রশাসনের পাশাপাশি জনজাগরণ গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ তিনি বলেন, এ বিষয়ে অপরাধীদের যে সমস্ত ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে সেগুলি জামিন যোগ্য না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উপযুক্ত কত’পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে৷